Blog
March 02, 2025

বাংলাদেশে বাড়ছে বিচার বহির্ভূত হত্যাঃ ৬ মাসে নির্বিচার গণপিটুনিতেই নিহত ১২১

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইউনুস সরকারের চরম ব্যর্থতা এবং অনেক ক্ষেত্রে সরকারি বাহিনীর নির্লিপ্ততা, পক্ষপাতিত্ব এমনকি পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভূমিকার কারণে বাংলাদেশে নির্বিচার গণপিটুনি এবং তাতে হত্যা বাড়ছেই। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন ভিত্তি করে উল্লেখ করা হয়েছে যে গত বছরের আগস্ট থেকে বিগত ছয় মাসে নির্বিচার গণপিটুনির ঘটনা ও নিহত মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১২১ জন নিহত হয়েছেন।

আরেক মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত হন ১৪৬ জন, যা আগের বছরের প্রায় তিন গুণ। ২০২৩ সালে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন।

মানবাধিকারকর্মীদের মতে, গত ৫ আগস্টের পর ‘মব ভায়োলেন্স’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতার পরিমাণ বেড়ে গেছে। সরকার তা বন্ধ করতে তেমন পদক্ষেপ নেয়নি। কখনো কখনো কাউকে জোর করে কোনো পদ থেকে নামিয়ে দেওয়াসহ নানাভাবে ‘মবের’ সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এ কারণেই বেড়েছে এসব মবকেন্দ্রিক সহিংসতা বা গণপিটুনি।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোও গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। গণপিটুনির মতো এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে তিনটি কারণ আছে বলে মনে করেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সাইদুর রহমান। তিনি প্রথম আলো পত্রিকাকে বলেছেন, প্রথমত, এটি ঘটছে পরিকল্পিত উসকানির কারণে। সরকারের সহযোগী বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় কিছু ব্যক্তি এতে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা একটা বড় কারণ। হয়তো ইচ্ছা করেই এ বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। সর্বোপরি সরকারের উদাসীনতা ও কোনো পদক্ষেপ নিতে অনীহার কারণেই বেড়ে যাচ্ছে গণপিটুনির প্রবণতা।

মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, গণপিটুনি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা আইনশৃঙ্খলার অবনতির চিত্রকেই তুলে ধরে। দিনের পর দিন এসব ঘটনা বাড়লেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করছেন এসব ব্যক্তি।

ডাকাতি ও দস্যুতা সাম্প্রতিক মাসগুলোয় আরও বেড়েছে। দেশে গত জানুয়ারিতে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৪২টি, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৯টি বেশি (৬৯ শতাংশ)। ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় গত ডিসেম্বরে মামলা হয়েছে ২৩০টি, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৫টি (৭০ শতাংশ) বেশি।

অপরাধ–বিশ্লেষকদের মতে, অপরাধের শিকার হওয়ার আতঙ্ক থেকে মানুষ আইন হাতে তুলে নিতে পারে। সেটা ঠেকাতে অপরাধ দমাতে হবে। আবার যাঁরা আইন হাতে তুলে নেন, তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।